নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: অনাবৃষ্টির পাশাপাশি সামুদ্রিক লবণাক্ত পানির প্রভাব ধান-সবজি উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার শঙ্কায় দিনাতিপাত করছে চকরিয়া পৌরসভাসহ ১৮ইউনিয়নের প্রায় ৬৫হাজার পরিবারের লোকজন।
স্থানীয় চাষীরা জানান, বছরের মধ্য জুলাই থেকে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় হল আমন আবাদের মোক্ষম সময়। কারণ এই সময় (আষাঢ়-শ্রাবণ) প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে তা আমন আবাদে কাজে লাগায় কৃষক। কিন্তু চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত তেমন একটা না হওয়ায় কক্সবাজারের চকরিয়ায় আমন আবাদে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। মাঝে মাঝে হালকা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হলেও চাষের জমিতে রোপা আমন লাগিয়েও কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছে না কৃষক। তীব্র তাপদাহের খরায় প্রয়োজনীয় পানির অভাবে আমনক্ষেত বিবর্ণ হয়ে পড়ছে।
অপরদিকে পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদী ও নদীর বিভিন্ন ছড়াখালগুলোতেও তেমন পানি নেই। এমনকি মাতামুহুরী নদী ও ছড়াখালগুলো ভাটির দিকে সরাসরি সমুদ্রের সাথে মিলিত হওয়ায় প্রতিদিনই অস্বাভাবিক জোয়ারের লবণাক্ত পানিতে ভরে উঠছে। এই অবস্থায় আমন আবাদ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গেল বছর চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার প্রায় ৬৫ হাজার কৃষক পরিবার ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করেছিল। তদ্মধ্যে উফসি প্রজাতির ধানের আবাদ হয়েছিল ১৮ হাজার হেক্টর ও হাইব্রিজ প্রজাতির ধানের আবাদ হয়েছিল ১৫০০ হেক্টর জমিতে। সেই পরিমাণ জমিতে এবারও আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।
অপরদিকে উপজেলায় প্রায় ১১২০ হেক্টর জমিতে রকমারি সবজির আবাদ হয়ে থাকে। তবে চলতি বর্ষা মৌসুমে এখনো বৃষ্টিপাতের দেখা না পাওয়ায় এবার ধান ও সবজি উৎপাদনে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কীনা তা নিয়ে খোদ কৃষিবিভাগই সন্দিহান।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজীব দে চকরিয়া নিউজকে জানান, প্রতিবছর আমন মৌসুমে ধান ও সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় বীজ, সার, কীটনাশক, কৃষি উপকরণসহ বিভিন্নভাবে কৃষকদের কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এসব প্রণোদনা সহায়তা পাওয়ার পরও প্রয়োজনীয় পানির অভাবে ধান ও সবজি উৎপাদনে যথেষ্ট বেগ পাচ্ছে কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, চকরিয়া উপজেলাটি পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদীবেষ্টিত। তাই নদীর দুই পয়েন্টে নির্মিত রাবার ড্যামের (ব্যারেজ) সহায়তায় উজান থেকে নেমে আসা মিঠাপানি ধরে রেখে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমেও ব্যাপক খাদ্যশস্য উৎপাদন করে থাকেন এখানকার প্রায় ৬৪ হাজার কৃষক পরিবার। কিন্তু বর্ষামৌসুম শুরুর আগেই নদীর রাবার ড্যাম দুটি খুলে দেওয়া হয়।
এছাড়া সরাসরি সমুদ্রের সঙ্গে মিলিত থাকায় আমন মৌসুমেও সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ভরে উঠে মাতামুহুরী নদী এবং অসংখ্য ছড়াখাল। এই কারণে বর্ষা মৌসুমে আমন আবাদে একমাত্র নির্ভর থাকতে হয় বৃষ্টিপাতের ওপর। কিন্তু এবার তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না কারোরই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এই অবস্থায় বিকল্প পন্থায় বিদ্যুৎ চালিত মোটর এবং ডিজেল চালিত পাম্প মেশিনের মাধ্যমে আবাদী জমিতে পানির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। একইসাথে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা স্ব স্ব এলাকার কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। যাতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়।
সরেজমিন গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণজোড়া ফসলি জমিতে দলবদ্ধ কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঝেমধ্যে সামান্য বৃষ্টিপাত হওয়ার পর অনেক স্থানে রোপিত ধানের চারা পানির অভাবে বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর পরও হাল না ছেড়ে কৃষক মাঠেই পড়ে রয়েছে।
সুরাজপুর পাবলিক স্কুলের পাশে গত রোববার বিকেলে আমন আবাদের চারা রোপনের সময় কথা হয় আহমদ হোসেনসহ একদল কৃষকের সঙ্গে। এ সময় তারা জানালেন, এই অঘোর বর্ষাতেও পানির অভাবে লাগানো চারা সঠিকভাবে দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছে না। অনেক স্থানে রোপিত চারা পুড়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বিরাজ করছে ।
পাঠকের মতামত: